সকাল-সন্ধ্যার মা'মুলাত ।

-: ভূমিকা :-

মানবজাতি বিভিন্ন সমস্যায় সম্মুখীন হয়ে আছে। যেমন শারীরিক সমস্যা বিভিন্ন শারীরিক রোগ, বালা মুসিবত, অর্থনৈতিক সমস্যা ,অস্বচ্ছলতা, পেরেশানি শত্রু শত্রুতা অনিষ্ঠতা । এবং নফসের সমস্যার কারণে চাইলেও পাপ হতে বের হয়ে না আসতে পারা।  এ সকল সমস্যা হতে মুক্তির জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নির্দেশিত কিছু আমলের মাধ্যমে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। ইনশাআল্লাহ আমল কারী অবশ্যই  ফলাফল প্রকাশিত দেখতে পাবে। যা প্রতিদিন ফজর এবং মাগরিবের পর আমল করতে হবে। 

১ নং ওযীফাঃ

সুরা হাশরের শেষ তিন আয়াতের আমলঃ

হযরত মা'কিল বিন ইয়াছার (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসুলে কারীম (সাঃ) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি সকাল বেলায় 'আউযুবিল্লাহিসসামী-ইল আলীমি মিনাশ শায়ত্ব-নির রাজীম, তিনবার পড়ে সুরা হাশরের শেষ তিন আয়াত একবার পাঠ করবে, আল্লাহ পাক তার জন্য সত্তর হাজার ফেরেস্তা নিযুক্ত করে দেন, যারা সেই সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকে। আর ঐদিনে যদি তার মৃত্যু হয়ে যায় তাহলে সে শহীদী মৃত্যু লাভ করবে।  কেউ যদি সন্ধ্যা বেলায় একই নিয়মে ঐ আমল করে তাহলে সেও উক্ত ফযীলতের অধিকারী হবে। অর্থ্যাৎ সত্তর হাজার ফেরেস্তা সন্ধ্যা থেকে সকাল পর্যন্ত তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকবে এবং ঐ রাতে যদি তার মৃত্যু হয়ে যায়, তবে সে শহীদী মৃত্যু লাভকরবে। মিশকাত শরীফ ১ম খন্ড ১৮৮ নং পৃঃ 

আমার করাচীর হুজুর হযরত মাওলানা শাহ্ হাকীম মুহাম্মদ আখতার সাহেব (রহঃ) বলেন এখানে দুটি জিনিস লক্ষনীয় (১) ফেরেস্তারা নিষ্পাপ ও বেগুনাহ্, ফেরেস্তারা যদি কারো জন্য ক্ষমা চায় আর স্বয়ং আল্লাহ পাক তাদেরকে ক্ষমা চাওয়ার জন্য নির্ধারিত করে দেন তবে আশা করা যায় যে, আল্লাহ্ তায়ালা অবশ্যই তাকে ক্ষমা করবেন। (২) আমাদের মৃত্যু দিনে অথবা রাত্রে হবে, আর হাদীসের মধ্যে শহীদী মৃত্যুর কথা বলা হয়েছে, শহীদী মৃত্যুর জন্য ঈমান শর্ত, ঈমান ব্যতিত কেউ শহীদ হতে পারবে না, তাহলে বুঝা গেল উক্ত আমলকারীকে আল্লাহ্পাক ঈমানী মৃত্যু নছীব করবেন। ছুবহানাল্লাহ।

هُوَ اللّٰهُ الَّذِىْ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ‌ ۚ عٰلِمُ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ‌ ۚ هُوَ الرَّحْمٰنُ الرَّحِيْمُ

هُوَ اللّٰهُ الَّذِىْ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ‌ۚ اَلْمَلِكُ الْقُدُّوْسُ السَّلٰمُ الْمُؤْمِنُ الْمُهَيْمِنُ الْعَزِيْزُ الْجَـبَّارُ الْمُتَكَبِّرُ‌ؕ سُبْحٰنَ اللّٰهِ عَمَّا يُشْرِكُوْنَ

هُوَ اللّٰهُ الْخَـالِـقُ الْبَارِئُ الْمُصَوِّرُ‌ لَـهُ الْاَسْمَآءُ الْحُسْنٰى‌ؕ يُسَبِّحُ لَهٗ مَا فِى السَّمٰوٰتِ وَالْاَرْضِ‌ۚ وَهُوَ الْعَزِيْزُ الْحَكِيْمُ 

২ নং ওযীফা :

জাহান্নাম হতে মুক্তির দু'আঃ


اللَّهُمَّ أَجِرْنِي مِنَ النَّارِ


আল্লাহুম্মা আজিরনী মিনান্নার (৭বার) হযরত মুসলিম তামীমী (রাঃ) বলেন যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আমাকে চুপে চুপে বলেছেন হে মুসলিম তামীমী যখন তুমি মাগরিবের নামায শেষ কর, তখন কারও সাথে কথা বলার পূর্বে সাতবার উপরোক্ত দু'আ পাঠ কর। যদি তুমি পাঠ কর, আর ঐ রাত্রে যদি তোমার মৃত্যু হয়ে যায়, তবে তোমার জন্য জাহান্নাম থেকে মুক্তিনামা লিখে দেয়া হবে। অনুরুপভাবে ফজরের নামাজের যদি কারও সাথে কথা বলার পূর্বে এই দু'আ পাঠ কর, আর ঐ দিনে যদি তোমার মৃত্যু হয়ে যায়, তবে তোমার জন্য জাহান্নাম থেকে মুক্তিনামা লিখে দেয়া হবে। আবু দাউদ-৫০৭৯, মুসনাদে আহমদ-মিশকাত শরীফ - ১ম খন্ড ২১০ পৃঃ


৩ নং ওযীফা: ৭বার ।

حَسْبِيَ اللهُ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَهُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ 

হাসবিআল্লাহু লা ইলাহা ইল্লাহু আলাইহি তা-য়াক্কালতু ওয়া হুয়া রাব্বুল আরশীল আযিম।

হযরত আবু দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লহ (সাঃ) ইরশাদ করেন যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যায় সাতবার করে উপরোক্ত দু'আ পাঠ করবে, তার দুনিয়া ও আখেরাতের সমস্ত সমস্যা সমাধানের জন্য আল্লাহ পাক জিম্মাদার (যথেষ্ঠ) হয়ে যাবেন।

(আবু দাউদ-৫০৮১, আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লায়ালী-হা:নং-৭১, মিশকাত শরীফ ১ম খন্ড-২১০, আফসীরে রুহুল মাআনী-পারা-১১, পৃঃ ৭৩)

উক্ত আমলের একটি আশ্চার্য ঘটনাঃ হযরত মুহাম্মদ ইবনে কা'ব (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, একবার একটি ফৌজি কাফেলা রোমের দিকে যাচ্ছিল। তাদের মধ্য থেকে এক ব্যক্তি ঘোড়ার পিঠ থেকে পড়ে গিয়ে তার উরুর হাড্ডি ভেঙ্গে যায়। সঙ্গীগণ তাকে বহন করে নিয়ে যাওয়ার কোন উপায় না পেয়ে বড় বিপদে পড়লেন। শেষে নিরুপায় হয়ে তার জন্য কিছু খাদ্য-পানীর করে ঘোড়াটি তার পাশে বেঁধে রেখে সামনের দিকে অগ্রসর হলেন। তারা যাওয়ার পর এক গায়েবী লোক এসে তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ওহে তোমার কি হয়েছে? উত্তরে সে বলল আমার উরুর হাড্ডি ভেঙ্গে যাওয়ায় আমার সাথীরা আমাকে রেখে চলে গেছে। তখন গায়েবী লোকটি বললেন, যে স্থানে ব্যথা অনুভব করছো সেখানে হাত রেখে পড়। 

حَسْبِيَ اللَّهُ لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ ۚ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ ۖ وَهُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ

বাংলা অনুবাদ: আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। তিনি ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই। আমি তাঁরই উপর ভরসা করি, আর তিনি মহান আরশের অধিপতি।


আপনি এটি তাসবীহ, দুআ, কিংবা স্মরণ হিসেবে পাঠ করতেপারেন।



তার ক্ষতস্থানে হাত রেখে উক্ত আয়াত খানা পাঠ করার পর সাথে সাথে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে গেলেন, নিজের ঘোড়ায় আরোহন করে সঙ্গীদের নিকট পৌছে গেলেন। ছুবহানাল্লাহ।

৪ নং ওযীফা: ৩বার।

মানুষ সাধারণত পাঁচটি জিনিসের হেফাজতের কামনা করে থাকে। দ্বীনের হেফাজত, জানের হেফাজত, সন্তানের হেফাজত, পরিবারের হেফাজত, সম্পদের হেফাজত। হাদীস শরীফে এসেছে, যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যায় নিম্নের দু'আটি (তিনবার) করে পাঠ করবে, আল্লাহপাক তার এই পাঁচটি জিনিসের হেফাজত করবেন।

দু'আটি এই

بِسْمِ اللَّهِ عَلَى دِيْنِي وَ نَفْسِي وَ وَلَدِي وَأَهْلِي وَمَالِي

বিসমিল্লাহি আলা দ্বীনি ওয়া নাফসী ওয়া ওয়ালাদী ওয়া আহ্-লী ওয়া-মালী।

(কানযুল-উম্মাল-৩৫০৬,

আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লায়ালী হা: নং-৫১)


৫ নং ওযীফা: ৭বার।

আজকাল মানুষ খুব দূর্ঘটনায় কবলিত হচ্ছে ,ক্যান্সার রোগ হচ্ছে, ঈমান হারা হচ্ছে, শত্রুর মুখোমুখি হচ্ছে, যারা সকাল সন্ধ্যায় নিম্নের দু'আটি (সাতবার) করে পাঠ করবে, আল্লাহ্ পাক তাকে উক্ত ৪টি বিষয় থেকে হেফাযত করবেন। দু'আটি এই-


اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوْذُبِكَ مِنْ جَهْدِ الْبَلَاءِ وَدَرَكِ الشَّقَاءِ وَسُوْء
الْقَضَاءِ وَشَمَائَةِ الْأَعْدَاء -


আল্লাহুম্মা ইন্নী আউযুবিকা মিন জাহিদল বালায়ি ওয়া-দারকিশ শাকায়ি ওয়াসূয়িল কাযা-য়ি ওয়া-শামাতাতিল আ'দায়ি। (বুখারী শরীফ-২৪৫১, মুসলিম শরীফ-২৭০৫, মেশকাত ৫ম খন্ড ২২২ পৃঃ)


৬ নং ওযীফা: ৩ বার ।


আজকাল মানুষের প্যারালাইসিস হচ্ছে, কুণ্ঠ রোগ হচ্ছে, পাগল ও অন্ধ হচ্ছে। হাদীস শরীফে আছে, যারা সকাল সন্ধ্যায় নিম্নের দু'আটি (তিনবার) করে পাঠ করবে। আল্লাহপাক তাদের এই চারটি মারাত্মক রোগ থেকে হেফাজত করবেন। দু'আটি এই -


سُبْحَانَ اللَّهِ الْعَظِيمِ وَبِحَمْدِهِ وَلَا حَوْلَ وَ لَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ


সুবহানাল্লাহিল আযীমি ওয়াবিহামদিহী ওয়ালা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লাবিল্লাহ।


(আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লায়ালী হাঃ নং-১৩৩, তাবারানী হা: নং-৯৪০, মুসনাদে আহমাদ-২০৬০২)


৭ নং ওযীফা: ৩ বার ।

হযরত আবান ইবনে উছমান (রাঃ) বলেন, আমি আমার পিতার যবানে শুনেছি যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যায় নিম্নের দু'আটি তিনবার করে পাঠ করবে, কোন কিছুই তার কোন প্রকার ক্ষতি করতে পারবে না। দু'আটি এই-

بِسْمِ اللَّهِ الَّذِي لَا يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ فِي الْأَرْضِ وَلَا فِي السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ


বাংলা অর্থ:

আল্লাহর নামে শুরু করছি, যাঁর নামের বরকতে আসমান ও জমিনে কোনো কিছুই ক্ষতি করতে পারে না। তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।

এটি প্রিয় নবী মুহাম্মদ ﷺ আমাদের শিখিয়েছেন, বিশেষ করে সকালে ও সন্ধ্যায় তিনবার পাঠ করলে আল্লাহ তাআলা রক্ষাকারী হন। (সূত্র: আবু দাউদ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ; হা

দীসটি হাসান সহীহ)।



বিসমিল্লাহিল্লাযী লা-ইয়াযুররু মা আছমিহী শাইউন ফিল আরদি ওয়ালা ফিসসামায়ি ওয়াহুয়াছছামীউল আলীম। (আবু দাউদ-৫০৮৮, জামে তিরমিজী-৩৩৮৮, মিশকাত শরীফ-২৩৯১)


৮ নং ওযীফা :৫ বার।

হাশরের ময়দানে হিসাব নিকাশ দিয়ে পার হওয়া বড় মুশকিল। তাই হাদীস শরীফে আছে কোন কোন নামাযের পরে নবীজি নিম্নের দু'আটি পড়তেন (মুসনাদে আহমাদ-২৪২১৫)। যারা নিম্নের দু'আটি পাঠ করবে আশা করা যায়, আল্লাহ তায়ালা ময়দানে তাদেরকে বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন


اَللَّهُمَّ حَاسِبْنِيْ حِسَابًا يَسِيرًا

আল্লাহুম্মা হা-সিবনী হিসাবাঁই ইয়াসীরা।


৯ নং ওযীফা:৭ বার ।

হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেন রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) আমাকে বলেছেন, হে আবু হুরাইরা


لَا حَولَ وَ لَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ


লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লাবিল্লাহ


বেশী বেশী পাঠ কর, কারণ এটা জান্নাতের রত্ন ভান্ডার। (জামে তিরমিজী-৩৬০১)


ফায়দা : উপরোক্ত ওযীফার মোট চারটিফ জিলত রয়েছে -

(১) এ কালিমাটি আরশের নিচে অবস্থিত জান্নাতের একটি রত্ন ভান্ডার। আর জান্নাতের ছাদ হলো আল্লাহ পাকের আরশ। এ দু'আ পাঠ করলে নেক আমল ও সৎকর্ম করার এবং গুনাহের কাজ থেকে বেঁচে থাকার তওফীক হয়।

(২) রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লাবিল্লাহ - দুনিয়া ও আখেরাত সম্পর্কীয় নিরানব্বইটি ব্যাধির ঔষধ। যার মধ্যে সর্বাধিক হালকা ব্যাধি হলো পেরেশানী। (চাই দুনিয়া সম্পর্কীয় হোক বা আখেরাত সম্পর্কীয় হোক।) মাজমাউয যাওয়ায়েদ-১৫৬৯০১।


(৩) বান্দা যখন এ কালিমা পাঠ করে আল্লাহপাক তার আরশের ফেরেস্তাদের কে সম্বোধন করে বলেন- আমার বান্দাটি আমার অনুগত হয়ে গেছে এবং নাফরমানী ও অবাধ্যতা পরিহার করেছে।


মাজমাউয যাওয়ায়েদ-১৫৬৯১০।


(৪) হাদীস শরীফে আছে শবে মে'রাজে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ও হযরত ইবরাহীম (আঃ) এর মধ্যে সাক্ষাতকালে হযরত ইবরাহীম (আঃ) বলেছেন, হে মুহাম্মদ (সাঃ) আপনি আপনার উম্মতকে বলে দিন তারা যেন লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লাবিল্লাহ্ দ্বারা জান্নাতের বাগান বৃদ্ধি করতে থাকে।

আমার করাচীর হযরত বলেন যারা গুনাহ্ ছাড়তে পারে না তারা যদি প্রত্যেক নামাযের পর, আগে পরে দরুদ শরীফ পড়ে সাতবার এ কালিমাটি পাঠ করে, আল্লাহ পাক তাকে গুনাহ ছাড়ার তওফীক দান করবেন।


১০ নং ওযীফা:৩ বার ।

হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ) বলেন নবীজি (সাঃ) ইরশাদ করেছেন অন্ধকার রাত্রিতে কালো পাথরের উপর কালো পিপীলিকার চলা ফেরা যেমন সুক্ষ, তার চেয়েও অধিকতর সুক্ষ ও গোপনভাবে আমার উম্মতের মধ্যে শিরকের গুনাহ প্রবেশ করে। এতদশ্রবনে হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ) খুবই ভীত ও পেরেশান হয়ে পড়লেন এবং আরজ করলেন ইয়া রাসুলাল্লাহ্ (সাঃ) তাহলে রক্ষা পাওয়ার উপায় কি?


নবীজী (সাঃ) বললেন- আমি কি তোমাকে এমন একটি দু'আ শিক্ষা দিব? যা পাঠ করলে তুমি অল্প শিরক, বেশী শিরক, ছোট শিরক, বড় শিরক এর গুনাহ্ হতে রক্ষা পাবে, তিনি বললেন জী হ্যাঁ ইয়া রাসুলাল্লাহ্ (সাঃ) অবশ্যই বলে দিন।হুজুর (সাঃ) বললেন তুমি এই দু'আ পাঠ কর-


اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُبِكَ أَنْ أَشْرِكَ بِكَ شَيْئًا وَأَنَا أَعْلَمُ وَاسْتَغْفِرُكَ لِمَا لَا أَعْلَمُ -


আল্লাহুম্মা ইন্নী আউযুবিকা আন উশরিকা বিকা শাইআঁন ওয়া আনা আ'লামু, ওয়া-আছতাগফিরুকা লিমা-লা-আ'লাম। (৩ বার) 

(মুসনাদে আহমাদ-১৯৬০৬, মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা-২৯৫৪৭, মাজমাউয যাওয়ায়েদ-১৪৬৭০। মিরকাত - ১০ম খন্ড ৭০ নং পৃঃ)



১১ নং অযিফা:৭ বার ।

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাছ (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী করিম (সাঃ) ইরশাদ করেন- যে ব্যক্তি নিম্ন দু'আটি একবার পাঠ করবে, তার ছওয়াব সত্তর জন ফেরেস্তাকে এক হাজার দিন পর্যন্ত ক্লান্ত শ্রান্ত করে দিবে, অর্থাৎ এক হাজার দিন পর্যন্ত লাগাতার তার ছওয়াব লিখতে লিখতে তারা ক্লান্ত হয়ে যায়। দু'আটি এই -

جَزَى ٱللّٰهُ عَنَّا مُحَمَّدًا مَا هُوَ أَهْلُهُ

জাযাল্লাহু আন্না মুহাম্মাদান মা হুওয়া আহলুহু। (মাজমাউয যাওয়ায়েদ-১৭৩০৫, হিলয়াতুল আউলিয়া-২০৬৩ ।

১২নং অযিফা:

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে খুবাইব (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, একদা গভীর অন্ধকার রাত্রিতে বৃষ্টিপাতের মধ্যে আমরা রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) এর খোঁজে বের হলাম, খুঁজতে খুঁজতে এক জায়গায় তিনাকে পেলাম, তখন তিনি বললেন (আব্দুল্লাহ) তুমি পড়। আমি বললাম কি পড়বো? নবীজী (সাঃ) বললেন প্রত্যেক সকাল-সন্ধ্যায় কুল হুয়াল্লাহু আহাদ, কুল আউযুবি রাব্বিল ফালাক, কুল আউযুবি রাব্বিননাস, প্রতিটি সূরা তিনবার করে পাঠ করবে, তাহলে তোমার জন্য সর্ব বিষয়ে যথেষ্ট হয়ে যাবে।


(মিশকাত শরীফ - ১ম খন্ড, ১৮৮ পৃঃ)এ কথাটির ২টি অর্থ হতে পারে

(১) যাদু টোনা, বান, মন্ত্র, ভুত-প্রেত, দেও, দস্যু যত কিছু আছে, সব রকমের ক্ষতি থেকে আল্লাহ পাক হেফাজত করবেন। এটা বড় পরীক্ষিত আমল। অনেক বাড়ীতে জ্বিন-পরীর উপদ্রোপ ছিল, এ তিন কুলের আমলের দ্বারা আল্লাহপাক রেহায় দিয়েছেন। এ বিষয়ে একটি মজার কথা হলো করাচীতে আমার হুজুরের নিকট বানে আক্রান্ত একজন ব্যক্তি আসলে, হুজুর তাকে তিন কুলের আমল দেন। আমল করার ফলে বান উল্টে গিয়ে যে ব্যক্তি বান মেরেছিল তাকে এ্যাটাক করলো। তখন সে তার উস্তাদের নিকট ঘটনা জানালে তিনি বললেন, তুমি যার উপর বান মেরেছো সে এমন একটা দামি আমল করতেছে, যার কারণে তোমার বান তার উপর ক্রিয়া করতে না পেরে তোমাকেই আক্রান্ত করেছে। (২) মুহাদ্দিসীনে কেরাম বলেন, অন্য কোন ওযীফা যদি আদায় নাও করতে পারে, এই তিন কুলের ওযীফাই তার জন্য যথেষ্ট হবে। মেরকাত ৪র্থ খন্ড - ৩৭০ নং পৃঃ ।


১৩ নং ওযীফা:

যে ব্যক্তি সকাল সন্ধ্যায় নিম্নের দু'আটি তিনবার করে পাঠ করবে, আল্লাহ তায়ালা তাকে কবরের সওয়াল-জওয়াব সহজ করে দিবেন, অর্থাৎ সে সওয়াল জওয়াবে আটকিবে না। দু'আটি এই-


رَضِيتُ بِاللهِ رَبًّا وَبِالْإِسْلَامِ دِينًا وَبِمُحَمَّدٍ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَبِيًّا ورَسُولاً -


রাযীতু বিল্লাহি রব্বাঁও ওয়াবিল ইসলামি দ্বীনাঁও ওয়াবি মুহাম্মাদিন (ছাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম) নাবিয়্যাওঁ ওয়া রসূলা। (আবু দাউদ-১৫২৯, মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা-২৬৫৪১)


১৪ নং ওযীফা:


সূরা ইউনুসের ৮১, ৮২ নং আয়াত সকাল সন্ধ্যা তিনবার করে পাঠ করলে আল্লাহপাক ছেহের ও যাদু থেকে হেফাযত করবেন। আয়াত-


فَلَمَّاۤ اَلْقَوْا قَالَ مُوْسٰى مَا جِئْتُمْ بِهِۙ السِّحْرُ‌ؕ اِنَّ اللّٰهَ سَيُبْطِلُهٗ ؕ اِنَّ اللّٰهَ لَا يُصْلِحُ عَمَلَ الْمُفْسِدِيْنَ وَيُحِقُّ اللّٰهُ الْحَـقَّ بِكَلِمٰتِهٖ وَلَوْ كَرِهَ الْمُجْرِمُوْنَ


ফালাম্মা আলকও' ক্বলা মূছা মা-জিই্তুম বিহিচ্ছিহ্-রা ইন্নাল্লাহা ছাইউবতিলুহূ ইন্নাল্লাহা লা ইউছলিহূ আমালাল মুফছিদিনা ওয়া ইউহিক্কুল্লাহূল হাক্কা বিকালিমিতিহি ওলাউ কারিহাল মুজরিমুন ।


মূল :

শায়খুল আরব ওয়াল আজম, রূমীয়ে যামানা, কুত্বে আলম, আরেফ বিল্লাহ্ হযরত মাওলানা শাহ্ হাকীম মুহাম্মদ আখতার সাহেব (রহঃ)

তরজমা :

আলহাজ্ব হযরত মাওঃ শাহ্ মুহাঃ শামছুল আলম সাহেব (দা. বা.)
(পীর সাহেব মোলামগাড়ী)
প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ও শাইখুল হাদীস: জামি'আ ইসলামিয়া এমদাদুল উলুম (মোলামগাড়ী মাদ্রাসা), আখতার নগর, শিবগঞ্জ, বগুড়া। 

খলিফা :আরেফবিল্লাহ্ হযরত মাওলানা শাহ্ হাকিম মোহাম্মদ আখতার সাহেব (রহঃ)


এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

কওমি মাদ্রাসায় কেন পড়বো